ক্যালাইডোস্কোপ (Bengali)
()
About this ebook
'ক্যালাইডোস্কোপ'-এর টুকরো টুকরো ঘটনাগুলোকে 'গল্প' বলা যেতে পারে কিনা আমার জানা নেই। হয়তো গল্প লেখারই চেষ্টা ছিল কিন্তু শেষমেশ হয়ে দাঁড়ালো নিছকই নিজের বেড়ে ওঠার দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থন, যা কিনা আমার মত গ্রাম বাংলায় বেড়ে ওঠা অনেকেরই মনের ভেতর সময়ের চাপে হারিয়ে যাওয়া কিছু সূক্ষ্ম অনুভূতি, যা কিনা ওই ক্যালাইডোস্কোপের ভাঙ্গা কাঁচের রঙবেরঙের টুকরোগুলোর মতই প্রতি নিয়ত
সৃষ্টি করে চলেছে অদ্ভুত অদ্ভুত নকশা, যার ছোঁয়া আজকের বিবর্ণ জীবনের ক্যানভাসে হঠাৎ হঠাৎ ছিটিয়ে দেয় সেই হারিয়ে যাওয়া রঙগুলো।পুরো পাণ্ডুলিপির দুটো পর্যায়, প্রথমটায় বেড়ে ওঠার স্বপ্নময় জীবনের ডানা মেলার টুকরো টুকরো অনুভূতি আর দ্বিতীয়টায়, যার নজর দিয়ে জীবনটাকে নতুনভাবে দেখতে শেখা, সেই ফ্রেন্ড ফিলোসফার এন্ড গাইড 'সিধু'-র সান্নিধ্যে কাটানো কিছু অমূল্য সময়।
Reviews for ক্যালাইডোস্কোপ (Bengali)
0 ratings0 reviews
Book preview
ক্যালাইডোস্কোপ (Bengali) - Tushar Sengupta
ক্যালাইডোস্কোপ
তুষার সেনগুপ্ত
Digital Publication
ISBN: 978-1-62598-054-0
Published By
Indic Publication Inc, California, USA
www.indicpub.com
email: indicpub@gmail.com
Copyright 2015 © Tushar Sengupta
All Rights Reserved. No Part of this publication may be reproduced, stored in a retrieval system or transmitted in any form or otherwise, without the prior written permission of the Author and or/the Publisher. Any and all vending sales and distribution not permitted without full book cover and this page.
স্বপ্নডানা
================
-এক-
শ্রীখণ্ড, আমার জন্মভূমি, আমার কৈশোর থেকে যৌবনের নাতিদীর্ঘ যাত্রাপথের নীরব সাক্ষী। অসংখ্য টুকরো টুকরো স্মৃতি। কিছু ইচ্ছা করেই ভুলতে চাই, কিছু ভুলে গেলে হয়তো নিজেকেই হরিয়ে ফেলবো আর কিছু মজার স্মৃতি মনে পরলেই নিজের অজান্তেই আজও ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি। স্মৃতির ঝুলি হাতড়ে আজ একটা মজার গল্প। জানিনা সবাই মজা পাবে কিনা, সেদিন আমি কিন্তু পেয়েছিলুম.......
আমি তখনও হাফপ্যান্ট, আশির দশকের প্রথমদিক। বাবার কর্মসূত্রে আমরা কালনাবাসী। ইস্কুলে গরমের ছুটি, সবাই মিলে কালনা থেকে ট্রেনে করে কাটোয়া। সেখান থেকে কাটোয়া-বর্দ্ধমান ন্যারোগেজ লাইনে ষ্টীমইঞ্জিনে টানা দুকামরার ছোট ট্রেন, আমরা বলতুম ছোটলাইনের ট্রেন। কালো ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে ধীর গতিতে চলতো। চলন্ত ট্রেন থেকে মাঝ রাস্তায় নেমে অনায়াসে লাইনের দুধারে ঝোপের থেকে বনকুল তুলে আবার ট্রেনে চাপা যেত। ওপরের দুই দাদা এই বীরত্ব দেখানোর সুযোগ পেলেও আমি পেতুম না, যদিও বনকুলের ভাগ সমান সমান না পেলেও কিছু পেতুম। অনেক পরে, মানে ইস্কুল পেরিয়ে কলেজে, একাএকা ছোটলাইনের চলন্ত ট্রেন থেকে নেমে ঝোপ থেকে বনকুল তুলে মুখে দিয়েও সেদিনের সেই স্বাদ কিন্তু আর পাইনি-
দেখেছো কান্ড? স্মৃতির চোরাগলিতে হারিয়ে আসল গল্প থেকেই সরে যাচ্ছি। নাহ্ এবার আসল গল্পে ফিরি। কাটোয়ায় ছোটলাইনের ট্রেনে উঠেই জানলার ধার দখল করে বসলুম। কয়েকজন মাত্র যাত্রী, অধিকাংশই গ্রামের গরীব চাষি। সেই ট্রেনে কেউই প্রায় টিকিট কেটে যাতায়াত করতো না, কিছু ষ্টেশনে এমনকি টিকিট কাউন্টারও ছিলনা, টিকিট চেকার তো কাল্পনিক বস্তু। বাবা টিকিট কাটতো বলে নিজেকে যেন সেই ট্রেনের মালিক বলে ভাবতুম। তীক্ষ হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন অবশেষে ছাড়ল। পরের ষ্টেশনই শ্রীখণ্ড। নিজের মেজাজে ধীরগতিতে চলছে আমার স্বপ্নযান আমারই স্বপ্নভূমির দিকে। ট্রেনলাইনের সমান্তরালে একেবারে এবড়োখেবড়ো সরু পাকারাস্তা চলে গেছে সেই বর্ধমান পর্যন্ত, হয়তো বা আরও দুরে। সারাদিনে চার-পাঁচটা বাস যাতায়াত করে এই পথে। বাবা দাড়িয়ে আছে ট্রেনের দরজায় আর আমার দৃষ্টি সেই বনকুলের ঝোপে। হঠাৎ কানে এলো বাবার তীক্ষ চিৎকার,
- এ্যাই আবদুল, কোথায় যাস?
চমকে রাস্তার দিকে তাকাতেই চোখে পড়লো, বাবার বাল্যবন্ধু আব্দুলচাচা সাইকেল চালিয়ে ট্রেনের পাশে পাশে যাচ্ছে। বাবার প্রশ্নের উত্তরে আরও তীক্ষ স্বরে জবাব দিল,
- আরে তপু যে! শ্রীখণ্ড পৌঁছো, রাতে কথা হবে, এখন একটু তাড়া আছে, অমি চললুম.......
বলেই জোরেজোরে প্যাডেল করতে করতে আমাদের পেছনে ফেলে এগিয়ে গেল। আমার স্বপ্নযান, গর্বের ছোটলাইনের চলন্ত ট্রেনে বসেবসে সাইকেল আরোহী আব্দুলচাচাকে সামনের রাস্তায় ক্রমশ: মিলিয়ে যেতে দেখলুম............
-দুই-
মাদুগ্গার ভাসান দিয়ে এসে মনটা এমনিতেই খারাপ তারওপর এবছর মামার বাড়ির দশমীর মিষ্টির পরে ঝালঝাল ঘুগনির অনুপস্থিতিটা মন খারাপের দগদগে ঘায়ে যেন লঙ্কা গুঁড়ো ছড়িয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ এই ছন্দপতনের কারণটা বুঝতে পারছি না। অসম্ভব রাগে বড় বারকোশে রাখা ডাইকরা নারকেল নাড়ু থেকে একসাথে তিনচারটে তুলে নিয়ে মুখে ঢুকিয়ে গরুর মতো জাবর কাটতে কাটতে খিড়কির দরজা দিয়ে বেরিয়ে বাড়ি সংলগ্ন মধুপুস্কুনির (আসল নাম মধু পুষ্করিণী, অপভ্রংশে মধুপুস্কুনি) শানবাঁধানো ঘাটের একদম শেষ সিঁড়িতে গিয়ে বসলুম। কথিত আছে শ্রীচৈতন্যদেব নাকি মধু খেয়ে এই পুকুরে হাত ধুতেই সমস্ত জল মধু হয়ে গিয়েছিল এবং ফলস্বরূপ মধু পুষ্করিণী নামকরণ। এই পুষ্করিণী নামধারী ডোবাটি, যেটি নাকি কোন একসময় দীঘির মতো বিশাল এবং আমার পিতৃকুল মালিকানাধীন ছিল। আমার পিতৃকুলের মতোই আমার স্বপ্নভূমি শ্রীখণ্ডের অধিকাংশই ছিল বৈষ্ণব মতাবলম্বী। দূগ্গাপুজোর দিনগুলো ছাড়া, প্রতিদিন ঘুম ভাঙত অনতিদূরের বারোয়ারী দূর্গামন্ডপ থেকে ভেসে আসা চড়াসুরের কীর্তন, সঙ্গে শ্রীখোলের মিষ্টি আওয়াজে। দুই বিপরীত মতের এ এক অপূর্ব সহবস্থান। যে বেদীতে শাক্তমতে মাদূগ্গার পুজো হতো, ভাসানের সন্ধেতেই সেখানে বৈষ্ণব পদাবলীর করুন সুর ধ্বনিত হত।
একে মাদুগ্গার ভাসান তারসাথে মামার বাড়ির ঘুগনির অনভিপ্রেত অনুপস্থিতি, ভারাক্রান্ত মনে মধুপুস্কনিতে একটার পর একটা ঢিল ছুড়ে মনের রাগ মেটাচ্ছি, ক্লাস ফাইভ চলছে, মনের দুঃখে ডাকছেরে কাঁদাতো আর চলেনা। হাওয়ায় ভেসে আসছে হারমোনিয়ামে কীর্তনের সুর। মধুপুস্কনির ঘোলা জল দূর্গাদশমীর চাঁদের আলোয় যেন কড়াইয়ে ফুটতে থাকা ভরা মাঘের নলেনগুড়।
হঠাৎ আমার ওপরের দাদা বরু এসে পাশে বসল। পকেট থেকে গোটাকতক নাড়কেলনাড়ু বের করে নিজে একটা মুখে পুরে নাড়ুভর্ত্তি হাতটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
- "ফিস্টি করবি আজরাতে? মিন্টে দুটো ডাকপাখি মেরেছে, দুটাকা করে