Discover millions of ebooks, audiobooks, and so much more with a free trial

Only $11.99/month after trial. Cancel anytime.

প্রতিশোধ : Protishodh
প্রতিশোধ : Protishodh
প্রতিশোধ : Protishodh
Ebook850 pages4 hours

প্রতিশোধ : Protishodh

Rating: 4.5 out of 5 stars

4.5/5

()

Read preview

About this ebook

চোখ মেলে প্রথমে কিছুই দেখতে পেল না পিউ। চারদিকে নিকষ কালো অন্ধকার। কোথাও আলোর চিহ্নমাত্র নেই। কোথায় সে? কী হয়েছিল ওর? সে কি ঘুমিয়ে পড়েছিল? চারদিকে এমন অন্ধকার কেন? ইলেকট্রিসিটি কি এখনো আসেনি? আইপিএসটাই বা চলছে না কেন? আশপাশে কোনোরকম শব্দ নেই। নিচতলা থেকেও কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না। চারদিকটা একদম নির্জন হয়ে আছে। বাসায় কি কেউ নেই? সবাই কি ওকে ফেলেই চলে গেল হলুদের অনুষ্ঠানে? গলা চড়িয়ে বুয়াকে ডাকতে চাইলো পিউ। মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হলো না, এমনকি নড়তেও পারছে না! খানিকটা নড়াচড়া করে বুঝতে পারলো, হাতলওয়ালা একটা চেয়ারে বসে আছে সে। দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে হাতদুটো। অনেক চেষ্টা করেও হাত নড়াতে পারছে না। পা দুটোও চেয়ারের পায়ার সাথে শক্ত করে বাঁধা, এমনকি মুখটাও বাঁধা! যতোই চিৎকার করছে, ততোই চিৎকারের বদলে মুখ দিয়ে কু কু শব্দ বের হচ্ছে। ভয় পেয়ে গেল পিউ। কী হচ্ছে এসব! কে ওকে এভাবে বেঁধে রেখেছে? কোথায় আছে এখন? নিজের বাসায়, নাকি অন্য কোথাও? মাথাটা ঘুরিয়ে চারপাশে তাকালো সে। চারদিকে এতো বেশি অন্ধকার যে কিছু দেখতে পাবার উপায় নেই। চোখটাও কি বাঁধা? নাহ্...চোখ বাঁধা নেই। পলক ফেলতে পারছে অনায়াসে। বাঁধা থাকলে তো পলক ফেলতে পারতো না। আরো একবার হাত নাড়লো সে। কিছুতেই নড়াতে পারলো না। এমন শক্ত করে বাঁধা যে একটু নড়াচড়া করলেই দড়িটা শক্ত হয়ে চেপে বসছে চামড়ার ওপর।

কিছুক্ষণ চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলো পিউ। খুব ক্লান্ত লাগছে, যেন কতোকাল ঘুমোয়নি। মাথাটাও কেমন ঝিমঝিম করছে। এতোক্ষণে তার মনে পড়েছে, পেছন থেকে কেউ একজন মুখ চেপে ধরেছিল। তারপর আর কিছু মনে নেই। কে মুখ চেপে ধরেছিল? এভাবে বেঁধে রেখেছেই বা কেন? তবে কি কেউ তাকে কিডন্যাপ করেছে? কে করেছে? বাড়িভর্তি মানুষের চোখ এড়িয়েই বা কীভাবে কিডন্যাপ করলো? নিচতলায় তো অনেক মানুষ ছিল। তাদের চোখ এড়িয়ে দোতলায় পা দেয়া সহজ ব্যাপার নয়। তাছাড়া ওদের বাড়ির সিকিউরিটি সিস্টেম অনেক কড়া। বাইরের যে কেউ হুট করে ঢুকতে পারবে না বাড়িতে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ওকে কিডন্যাপ করার কোনো কারণ নেই। তার চলাফেরা একদমই পরিমিত। নীতু ছাড়া আর কারো সাথেই তেমন সখ্য বা বন্ধুত্ব নেই। মাস্টারমাইন্ড স্কুলে একই ক্লাসে পড়ে ওরা দুজন। স্কুল ছাড়া আর কোথাও যাওয়া হয়না ওর। গেলেও আব্বু-আম্মুর সাথে যায় গাড়িতে চড়ে। স্কুলেও যাওয়া-আসা করে গাড়িতেই।

তাহলে কি আব্বুর কোনো শত্রু? ওর আব্বু ওবায়েদ সাহেব অনেক বড় ব্যবসায়ী। ব্যবসায়িক কারণে তার শত্রু থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু ওকে কেন কিডন্যাপ করলো? পাশের রুম থেকে অস্পষ্ট কথাবার্তা শোনা আচ্ছে। মনে হচ্ছে, কয়েকজন মিলেই কিডন্যাপ করেছে ওকে। তারা নিশ্চয়ই এতোক্ষণে বাসায় ফোন করে কিডন্যাপ করার খবরটা জানিয়েছে। হয়তো সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করছে এখন। পুলিশকেও জানানো হয়েছে। ক্ষীণ আশার আলো জ্বলে উঠলো পিউয়ের মনে। পুলিশ অফিসারদের সাথে ওর আব্বুর অনেক জানাশোনা আছে। এছাড়াও মন্ত্রী লেভেলের অনেকের সাথে ব্যবসার খাতিরে ভালো রকমের ওঠাবসা আছে। তিনি নিশ্চয়ই ওকে খুঁজে বের করবেন। কিন্তু এদের উদ্দেশ্যটা কী? এরা কি ওকে মেরে ফেলবে? নাকি জিম্মি করে আব্বুর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেবে? দ্বিতীয়টাই হবে হয়তো। টাকার জন্যই কোটিপতি ব্যবসায়ীর মেয়েকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। মেরে ফেলার তো কোনো কারণ নেই। রহিমা বুয়ার প্রিয় বাংলা মুভিতে এসব কাহিনি প্রায়ই দেখা যায়। টাকা বা সম্পত্তির লোভে নায়িকাকে কিডন্যাপ করে ভিলেন। তারপর নায়িকার বাবাকে ফোন করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। অথবা জিম্মি করে সব সম্পত্তি লিখে নেয়। মুভিতে এগুলো হতেই পারে। তাই বলে বাস্তবেও এরকম হয়, সেটা ওর ধারণার বাইরে ছিল। অবশ্য বুয়া প্রায়ই বলে, জীবনটাই নাকি আস্ত একটা মুভি। তাছাড়া আম্মুর মুখে অনেকবার শুনেছে আব্বুর নাকি অনেক শত্রু। এদের মধ্যে কিছু আছে বন্ধুরূপী শত্রু। সামনাসামনি দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলে, আন্তরিক ব্যবহার করে। আর তলে তলে ক্ষতি করে। কে নাকি একবার ক্ষতি করার হুমকিও দিয়েছিল আব্বুকে। তারপর থেকেই বাসায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেসময়ে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল সে। এক ধরনের আতঙ্ক পেয়ে বসেছিল তাকে। সবসময় মনে হতো, এই বুঝি কেউ কিডন্যাপ করতে এলো। পাপন অনেক রাত করে বাড়ি ফিরতো বলে ওর খুব টেনশন হতো। তাই দেখে  পাপনের সে কী হাসি! বলেছিল, 'আরে পাগলি, তুই শুধু শুধুই ভয় পাচ্ছিস। এসব মুভিতেই দেখায়। নইলে মুভি জমবে না তো। বাস্তবে এসব হয় না। আর আমাদের বেলায় তো একদমই হবে না। বাড়িতে কড়া সিকিউরিটি সিস্টেমের ব্যবস্থা করেছেন আব্বু। এই সিকিউরিটি সিস্টেম টপকে কাউকে কিডন্যাপ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।' পাপনের কথা সেদিন মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেছিল পিউ। মন থেকে কিডন্যাপড হবার ভয়টা ঝেড়ে ফেলেছিল। অথচ আজ অসম্ভবটা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়েই গেল।

LanguageBengali
Release dateMay 23, 2021
ISBN9798201144333
প্রতিশোধ : Protishodh
Author

রেশমী রফিক

জন্ম ১১ নভেম্বর। পিতা মরহুম মো. রফিক হোসেন, মাতা মরহুমা হোসনে আরা বেগম। পৈতৃক নিবাস ঢাকার মগবাজারে।   বর্তমান নিবাস স্কটল্যান্ডের মাদারওয়েল শহরে। পড়াশোনা করেছেন বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে। ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার প্রতি লেখিকার অদম্য নেশা।  ‘প্রতিশোধ’ লেখিকার প্রথম উপন্যাস। আশা করি, উপন্যাসটা পাঠকের মন জয় করবে।

Related categories

Reviews for প্রতিশোধ

Rating: 4.5 out of 5 stars
4.5/5

4 ratings0 reviews

What did you think?

Tap to rate

Review must be at least 10 words

    Book preview

    প্রতিশোধ - রেশমী রফিক

    প্র তি শো ধ

    রেশমী রফিক

    প্রতিশোধ

    রেশমী রফিক

    প্রথম প্রকাশ

    ...

    প্রকাশক (ই-বুক ভার্সন)- ইবাংলা প্রকাশনী

    ...

    স্বত্ব - লেখক

    প্রচ্ছদ -  ইবাংলা প্রকাশনী

    উৎসর্গ

    আমার আব্বু ও আম্মু-  মরহুম মো. রফিক হোসেন

    এবং মরহুমা হোসনে আরা বেগম

    যাঁরা আমাকে এই পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন।

    আমার জীবনসঙ্গী - মো. হাবিবুল ইসলাম

    যাঁর হাত ধরে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলতে চাই।

    রেশমী রফিক

    জন্ম ১১ নভেম্বর। পিতা মরহুম মো. রফিক হোসেন, মাতা মরহুমা হোসনে আরা বেগম। পৈতৃক নিবাস ঢাকার মগবাজারে। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী থানায়। জন্ম এবং ছোটবেলা কেটেছে সৌদি আরবের জিজান শহরে। বর্তমান নিবাস স্কটল্যান্ডের মাদারওয়েল শহরে। পড়াশোনা করেছেন বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে। ছোটবেলা থেকেই বই পড়ার প্রতি লেখিকার অদম্য নেশা। কৈশোরে রকিব হাসানের ‘তিন গোয়েন্দা’র একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে হুমায়ূন আহমেদের লেখার বলতে গেলে অন্ধ পাঠক ছিলেন। অন্যান্য সাহিত্যকদের বইও কমবেশি পড়েছেন তিনি। ‘প্রতিশোধ’ লেখিকার প্রথম উপন্যাস। আশা করি, উপন্যাসটা পাঠকের মন জয় করবে।

    ভূমিকা

    ‘মান্নাত’ আমার প্রথম ছেলে। গর্ভজাত নয়, পালক। আমার মতোই পিতৃমাতৃহীন, তবে খরগোশ প্রজাতির। জনসাধারণের ভাষায় সে পোষা প্রাণী। কিন্তু আমার কাছে সে আমার বড় ছেলে। আমার গর্ভজাত ছেলেদের একমাত্র বড় ভাই। নামটা খুব শখ করে রেখেছিলাম আমি। তবে ‘মনু’ বলে ডাকতাম ওকে। আদর করতাম নিজের ছেলের মতোই। একদিন সে আমাদের সবাইকে ফেলে চলে গেলো না ফেরার দেশে। এত বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন! তার থেকেও বেশি কষ্ট হয়েছিলো আমার ছেলে সুন্নিয়্যাতের কান্না দেখে। ভাইয়ের জন্য এতটা কান্না সে মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলো, ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

    ফেসবুকে ‘বিইং ওমেন’ নামে মেয়েদের একটা গ্রæপের সদস্য ছিলাম তখন। প্রায়ই নিজের অভিজ্ঞতা লিখতাম ওখানে। সদ্য হারানো ‘মনু’কে নিয়েও লিখলাম। অনেকেই আগ্রহী হলো; জানতে চাইলো ওর কথা। ওর ছবি দেখতে চাইলো। আমি লিখতে শুরু করলাম। ছয়টা বছর আমার জীবনটাকে আলোকিত করে রেখেছিলো আমার এই পালক ছেলে। ছয় বছরে যে ওকে ঘিরে কতশত স্মৃতি আমার আর আমার ছেলেদের! আমার স্বামীর স্মৃতিও কম নয়। এত স্মৃতি অল্প কথায় জানানো যাবে না। তাই অল্প করে লিখতে শুরু করলাম। প্রতিটা পর্বের সাথে একটা করে ছবি। ধীরে ধীরে একটা গল্প তৈরি হয়ে গেলো। আমি গল্পটার নাম দিলাম, ‘মনু দ্য সারভাইভড চাইল্ড’। সেই থেকে আমার লেখালেখির শুরু...

    মনুর গল্পটা শেষ হবার পর আরেকটা গল্প লেখার ঝোঁক হলো। শুরু করলাম ‘প্রতিশোধ’ নামের এই আখ্যান। আশা করি এই অখ্যান মন ছুঁয়ে যাবে পাঠকের।

    ‘পেন্সিল’ কে আমার পক্ষ থেকে অশেষ ধন্যবাদ। তাদের উদ্যোগে আমার লেখা উপন্যাস প্রথমবারের মতো ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। যারা এই উপন্যাসটি লিখতে উৎসাহ জুগিয়েছেন আমাকে এবং যারা সব সময়ের জন্যই আমার গল্পের অপেক্ষায় থেকেছেন, এখনো থাকেন তাদের সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

    ই-বই এ রুপান্তর ও প্রকাশনা করছে – ইবাংলা প্রকাশনী

    গাড়ি থেকে নেমেই পিউ বাড়িটার দিকে তাকালো। ওদের বাড়িটা আজ অনেক সুন্দর করে সেজেছে। দূর থেকে দেখতে আরো সুন্দর দেখাচ্ছে। বিয়েবাড়ি সাধারণতঃ লাল, নীল, সবুজ নানা রঙের মরিচবাতি দিয়ে সাজানো হয়। কিন্তু এই বাড়িটা শুধু ফুল দিয়েই সাজানো হয়েছে। অদ্ভুত চোখে পিউ বাড়িটার দিকে তাকিয়ে রইলো। শাহানা নিচতলায় ছিলেন। শেষ মুহূর্তে চূড়ান্ত তদারকি করছেন তিনি। পিউকে ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাড়া দিলেন,

    কী হলো? ওভাবে হাঁ করে কী দেখছিস? শিগগির কর। এক্ষুনি বের হব আমরা।

    মায়ের কথা শুনে পিউ বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়লো। আজ ওর একমাত্র ভাই পাপনের বিয়ে। পাপন ওর থেকে প্রায় দশ বছরের বড়। নিজের পছন্দেই বিয়ে করছে সে। মোনালিসা, সংক্ষেপে মোনার সাথে তার অনেক দিনের পরিচয়...তারপর প্রেম। বছরখানেক চুটিয়ে প্রেম করেছে ওরা। অতঃপর এই প্রেমের সফল পরিণতি হিসেবে পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক হয়েছে। মূলত ওবায়েদ সাহেবের আগ্রহেই বিয়েটা এক্ষুনি হচ্ছে। তার মতে, ছেলে যেহেতু মেয়ে পছন্দ করেই রেখেছে, সেহেতু ঝুলে না থেকে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়েটা হয়ে যাক। তাহলে পাপন সংসারে থিতু হবে। বন্ধুবান্ধব ছেড়ে ঘরসংসারের দিকে মন দেবে। পারিবারিক ব্যবসা নিজ দায়িত্বে দেখাশোনা করবে। ওবায়েদ সাহেবের বয়স হয়েছে। শরীরে রোগ-বিরোগ বাসা বাঁধার পাঁয়তারা করছে। ইতোমধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। তখন থেকেই চাচ্ছিলেন ছেলে ব্যবসায় মন দিক। সংসারের প্রতি দায়িত্ববান হোক। কিন্তু পাপন তা করবে না। সে তার বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডায় মত্ত। পড়াশোনায় তো কোনোকালেই মন ছিল না। কোনোরকমে টেনেটুনে বিবিএ শেষ করেছে। তারপর আর পড়াশোনার রাস্তা মাড়ায়নি। ছেলের এমন বাউÐুলে অবস্থা দেখে ওবায়েদ সাহেব অনেকদিন ধরেই চিন্তিত ছিলেন। ছোটবেলা থেকে অতিরিক্ত আদর পেয়ে মাথায় উঠে গিয়েছে পাপন। শাসন তো করাই যায় না। ভালোভাবে একটা কথা বললেও শোনে না সে। সারাদিন শুধু বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডাবাজি করে, দলবেঁধে ঘুরতে যায়। হাই ক্লাস সোসাইটিতে যাকে বলে ‘চিলিং’। প্রতি মাসে হাত খরচ লাগে লাখখানেক। এতো টাকা কী করে, কোথায় খরচ করে, কখন কার সাথে মেশে সে ব্যাপারে কথা বলতে গেলেই তার মেজাজ বিগড়ে যায়। তাই মোনার কথা জানার পর ওবায়েদ সাহেব আর দেরি করেননি। সরাসরি মোনাদের বাসায় গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব, বিয়ে দিয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফেরাতে হবে। মোনার ব্যাপারেও খোঁজখবর নিয়েছেন। মেয়েটা দেখতে-শুনতে চালচলনে খুবই ভালো; ল²ী একটা মেয়ে। ঢাকার একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছে। ফ্যামিলিও বেশ ভালো।

    রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিলো পিউ। পার্লারে গিয়েছিল সে। সাজতে গিয়েই দেরি হয়ে গিয়েছে। তাও শুধু মেকআপ করে এসেছে; চুল বাঁধেনি। নীতু খুব সুন্দর করে খেজুর বেণী করতে পারে। আগেই ওকে বলে রেখেছিল খেজুর বেণী করে দেবার কথা। কিন্তু ওর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পারলার থেকে ফেরার পথে গাড়িতে বসে অনেকবার ওকে ফোন করেছে পিউ। মোবাইলটা বন্ধ পেয়ে ওর বাসায় ফোন করেছিল। ওর মা জানিয়েছেন, সে নাকি ইতোমধ্যেই ওদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবে। অথচ ঘণ্টাখানেক হয়ে গেল; এখনো কোনো খবর নেই নীতুর। হয়তো বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গিয়েছে। বাসায় মিথ্যে বলে বেরিয়েছে। বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাবে ভালো কথা; একটাবার তো ফোন করে জানাতে পারতো! ফোন না করলেও একটা মেসেজ পাঠাতে পারতো! এখন তো খোলা চুলেই যেতে হবে হলুদের অনুষ্ঠানে। এদিকে হাতে বেশি সময় নেই। সবাই ইতোমধ্যেই রেডি হয়ে নিচতলায় চলে গিয়েছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে দ্রæত চুলটা আঁচড়ে নিলো পিউ। নিজেকে একবার ভালো করে দেখে নিলো আয়নায়। খোলা চুলে অবশ্য খুব একটা খারাপ লাগছে না। এখন শুধু শাড়ির সাথে ম্যাচ করে কেনা হালকা জুয়েলারি পরলেই চলবে। ভাগ্যিস পারলারে যাবার আগেই শাড়িটা পরেছিল। কানে দুলটা পরে যখন গলায় নেকলেসটা পরতে গেল, ঠিক তখনই চারদিক অন্ধকার হয়ে গেল। ইলেকট্রিসিটি চলে গিয়েছে! একরাশ বিরক্তিতে মুখটা ছেয়ে গেল পিউয়ের। আর একটা মিনিট পর ইলেকট্রিসিটি গেলে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হতো? আশ্চর্য! এতোক্ষণে তো আইপিএস অন হয়ে যাবার কথা। এখনো লাইট জ্বলছে না কেন? সে চিৎকার করে রহিমাকে ডাকলো,

    বুয়া, দেখো তো আইপিএসটা কেন অন হচ্ছে না?

    বুয়ার কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেল না। সবাই এখন নিচতলায়। সেখানে অনেক শোরগোল চলছে। এতো শোরগোলের মধ্যে দোতলা থেকে চিৎকার করলে কেউ শুনবে কিনা সন্দেহ। ঘুরে দাঁড়াতেই পিউ লক্ষ করলো, আশপাশের বাড়িগুলোতে ইলেকট্রিসিটি আছে। শুধু ওদের বাড়িতেই নেই। কিছুটা অবাক হয়ে সে দরজার দিকে পা বাড়ালো। ঠিক তখনই পেছন থেকে কেউ একজন ওর মুখ চেপে ধরলো রুমাল দিয়ে।

    চোখ মেলে প্রথমে কিছুই দেখতে পেল না পিউ। চারদিকে নিকষ কালো অন্ধকার। কোথাও আলোর চিহ্নমাত্র নেই। কোথায় সে? কী হয়েছিল ওর? সে কি ঘুমিয়ে পড়েছিল? চারদিকে এমন অন্ধকার কেন? ইলেকট্রিসিটি কি এখনো আসেনি? আইপিএসটাই বা চলছে না কেন? আশপাশে কোনোরকম শব্দ নেই। নিচতলা থেকেও কোনো শব্দ শোনা যাচ্ছে না। চারদিকটা একদম নির্জন হয়ে আছে। বাসায় কি কেউ নেই? সবাই কি ওকে ফেলেই চলে গেল হলুদের অনুষ্ঠানে? গলা চড়িয়ে বুয়াকে ডাকতে চাইলো পিউ। মুখ দিয়ে কোনো শব্দ বের হলো না, এমনকি নড়তেও পারছে না! খানিকটা নড়াচড়া করে বুঝতে পারলো, হাতলওয়ালা একটা চেয়ারে বসে আছে সে। দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে হাতদুটো। অনেক চেষ্টা করেও হাত নড়াতে পারছে না। পা দুটোও চেয়ারের পায়ার সাথে শক্ত করে বাঁধা, এমনকি মুখটাও বাঁধা! যতোই চিৎকার করছে, ততোই চিৎকারের বদলে মুখ দিয়ে কু কু শব্দ বের হচ্ছে। ভয় পেয়ে গেল পিউ। কী হচ্ছে এসব! কে ওকে এভাবে বেঁধে রেখেছে? কোথায় আছে এখন? নিজের বাসায়, নাকি অন্য কোথাও? মাথাটা ঘুরিয়ে চারপাশে তাকালো সে। চারদিকে এতো বেশি অন্ধকার যে কিছু দেখতে পাবার উপায় নেই। চোখটাও কি বাঁধা? নাহ্...চোখ বাঁধা নেই। পলক ফেলতে পারছে অনায়াসে। বাঁধা থাকলে তো পলক ফেলতে পারতো না। আরো একবার হাত নাড়লো সে। কিছুতেই নড়াতে পারলো না। এমন শক্ত করে বাঁধা যে একটু নড়াচড়া করলেই দড়িটা শক্ত হয়ে চেপে বসছে চামড়ার ওপর।

    কিছুক্ষণ চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলো পিউ। খুব ক্লান্ত লাগছে, যেন কতোকাল ঘুমোয়নি। মাথাটাও কেমন ঝিমঝিম করছে। এতোক্ষণে তার মনে পড়েছে, পেছন থেকে কেউ একজন মুখ চেপে ধরেছিল। তারপর আর কিছু মনে নেই। কে মুখ চেপে ধরেছিল? এভাবে বেঁধে রেখেছেই বা কেন? তবে কি কেউ তাকে কিডন্যাপ করেছে? কে করেছে? বাড়িভর্তি মানুষের চোখ এড়িয়েই বা কীভাবে কিডন্যাপ করলো? নিচতলায় তো অনেক মানুষ ছিল। তাদের চোখ এড়িয়ে দোতলায় পা দেয়া সহজ ব্যাপার নয়। তাছাড়া ওদের বাড়ির সিকিউরিটি সিস্টেম অনেক কড়া। বাইরের যে কেউ হুট করে ঢুকতে পারবে না বাড়িতে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ওকে কিডন্যাপ করার কোনো কারণ নেই। তার চলাফেরা একদমই পরিমিত। নীতু ছাড়া আর কারো সাথেই তেমন সখ্য বা বন্ধুত্ব নেই। মাস্টারমাইন্ড স্কুলে একই ক্লাসে পড়ে ওরা দুজন। স্কুল ছাড়া আর কোথাও যাওয়া হয়না ওর। গেলেও আব্বু-আম্মুর সাথে যায় গাড়িতে চড়ে। স্কুলেও যাওয়া-আসা করে গাড়িতেই।

    তাহলে কি আব্বুর কোনো শত্রæ? ওর আব্বু ওবায়েদ সাহেব অনেক বড় ব্যবসায়ী। ব্যবসায়িক কারণে তার শত্রæ থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু ওকে কেন কিডন্যাপ করলো? পাশের রুম থেকে অস্পষ্ট কথাবার্তা শোনা আচ্ছে। মনে হচ্ছে, কয়েকজন মিলেই কিডন্যাপ করেছে ওকে। তারা নিশ্চয়ই এতোক্ষণে বাসায় ফোন করে কিডন্যাপ করার খবরটা জানিয়েছে। হয়তো সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করছে এখন। পুলিশকেও জানানো হয়েছে। ক্ষীণ আশার আলো জ্বলে উঠলো পিউয়ের মনে। পুলিশ অফিসারদের সাথে ওর আব্বুর অনেক জানাশোনা আছে। এছাড়াও মন্ত্রী লেভেলের অনেকের সাথে ব্যবসার খাতিরে ভালো রকমের ওঠাবসা আছে। তিনি নিশ্চয়ই ওকে খুঁজে বের করবেন। কিন্তু এদের উদ্দেশ্যটা কী? এরা কি ওকে মেরে ফেলবে? নাকি জিম্মি করে আব্বুর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেবে? দ্বিতীয়টাই হবে হয়তো। টাকার জন্যই কোটিপতি ব্যবসায়ীর মেয়েকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। মেরে ফেলার তো কোনো কারণ নেই। রহিমা বুয়ার প্রিয় বাংলা মুভিতে এসব কাহিনি প্রায়ই দেখা যায়। টাকা বা সম্পত্তির লোভে নায়িকাকে কিডন্যাপ করে ভিলেন। তারপর নায়িকার বাবাকে ফোন করে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে। অথবা জিম্মি করে সব সম্পত্তি লিখে নেয়। মুভিতে এগুলো হতেই পারে। তাই বলে বাস্তবেও এরকম হয়, সেটা ওর ধারণার বাইরে ছিল। অবশ্য বুয়া প্রায়ই বলে, জীবনটাই নাকি আস্ত একটা মুভি। তাছাড়া আম্মুর মুখে অনেকবার শুনেছে আব্বুর নাকি অনেক শত্রæ। এদের মধ্যে কিছু আছে বন্ধুরূপী শত্রæ। সামনাসামনি দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলে, আন্তরিক ব্যবহার করে। আর তলে তলে ক্ষতি করে। কে নাকি একবার ক্ষতি করার হুমকিও দিয়েছিল আব্বুকে। তারপর থেকেই বাসায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেসময়ে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল সে। এক ধরনের আতঙ্ক পেয়ে বসেছিল তাকে। সবসময় মনে হতো, এই বুঝি কেউ কিডন্যাপ করতে এলো। পাপন অনেক রাত করে বাড়ি ফিরতো বলে ওর খুব টেনশন হতো। তাই দেখে  পাপনের সে কী হাসি! বলেছিল, ‘আরে পাগলি, তুই শুধু শুধুই ভয় পাচ্ছিস। এসব মুভিতেই দেখায়। নইলে মুভি জমবে না তো। বাস্তবে এসব হয় না। আর আমাদের বেলায় তো একদমই হবে না। বাড়িতে কড়া সিকিউরিটি সিস্টেমের ব্যবস্থা করেছেন আব্বু। এই সিকিউরিটি সিস্টেম টপকে কাউকে কিডন্যাপ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’ পাপনের কথা সেদিন মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেছিল পিউ। মন থেকে কিডন্যাপড হবার ভয়টা ঝেড়ে ফেলেছিল। অথচ আজ অসম্ভবটা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়েই গেল।

    যতোই সময় পেরিয়ে যাচ্ছে, ততোই অধৈর্য হয়ে পড়ছে পিউ। এভাবে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বসে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। আর কতোক্ষণ এভাবে বসে থাকতে হবে কে জানে। হয়তো কিডন্যাপার তার ডিমান্ডের কথা জানিয়েছে আব্বুকে। পুলিশকে জানাতেও নিষেধ করেছে। আব্বু তো পুলিশকে জানাবেই; তবে গোপনে। সাদা পোশাকে পুলিশ খোঁজাখুঁজি শুরু করবে। বাসার ল্যান্ডফোন, মোবাইল ট্যাপ করা হবে। কিডন্যাপারের সাথে দফায় দফায় কথা হবে। কীভাবে ডিমান্ড পুরণ করা হবে, কীভাবে ওকে ফেরত দেবে কিডন্যাপার, সেসব ব্যাপারে আলোচনা হবে। এগুলো সে মুভি দেখে জেনেছে। কে জানে এতোক্ষণে হয়তো গোপন সূত্র ধরে কাছাকাছি চলে এসেছে পুলিশ। লোকগুলোকে হাতেনাতে ধরতে আর ওকে উদ্ধার করতে খুব বেশি একটা সময় লাগবে না তাদের।

    খুট করে শব্দ হলো। শব্দ শুনে সচকিত হয়ে উঠলো পিউ। পরক্ষণেই বুঝতে পারলো, কেউ একজন রুমের দরজা খুলেছে। মরিয়া হয়ে উঠলো সে। ‘কে...কে ওখানে? আমাকে ছেড়ে দাও, দড়ি খুলে দাও’ কথাগুলো বলতে চাইলো। কিন্তু মুখ ফুটে কোনো কথা বের হলো না। কিছুক্ষণ পর অন্ধকার রুমে আলো জ্বলে উঠলো। ঝট করে চোখ বন্ধ করে ফেললো সে।

    অনেকটা সময় ধরে অন্ধকারে ছিল বলে আলোটা চোখে লাগছে খুব। চোখ বন্ধ থাকা অবস্থাতেই টের পেল কেউ একজন এগিয়ে আসছে ওর দিকে। ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকালো সে। প্রথমে শুধু একজোড়া চোখ দেখলো। তারপর বুঝতে পারলো, একটা লোক ওর ওপর ঝুঁকে আছে। লোকটা ওর মুখের কাপড় খুলে দিলো। পেছনে আরো দুজন দাঁড়িয়ে আছে। তাদের ডেকে কিছু একটা নির্দেশ দিলো। নির্দেশ পেয়ে তারা রুম থেকে বের হয়ে গেল। পিউ লোকটাকে জিজ্ঞেস করলো,

    - কে আপনি? আমিই বা এখানে কেন?

    লোকটা কিছু বলার আগেই রুমের দরজা খুলে গেল। যারা বের হয়ে গিয়েছিল, তারা আবার ফিরে এসেছে। একজন বললো,

    -  কাজি চইলা আইছে, স্যার।

    -  ডাইনিংয়ে বসতে দাও। আমি আসছি।

    -  জি স্যার...

    ওরা চলে যাবার পর লোকটা আবার পিউয়ের দিকে ফিরলো। পিউ বললো,

    -  আপনি কি আমাকে কিডন্যাপ করেছেন?

    ওর দিকে ঝুঁকলো লোকটা। কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পর শান্ত গলায় বললো,

    -  আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য না। সময় হলেই সব জানতে পারবা।

    -  আমাকে কিডন্যাপ করার কারণটা তো বলবেন। আমি তো আপনার কোনো ক্ষতি করিনি। আব্বুর সাথে যদি আপনার...

    -  এক কথা আমি দুইবার বলি না। এখন থেকে যা কিছু বলবো, ল²ী মেয়ের মতো প্রথমবারেই শোনার চেষ্টা করবা।

    লোকটা পিউয়ের হাত-পায়ের দড়ি খুলে দিলো। তারপর ওকে নিয়ে গেল রুমের বাইরে। রুম থেকে বের হলেই ডাইনিং। সেখানে টেবিলের একপাশে চেয়ারে বসে আছে একজন হুজুর টাইপের লোক। তার পরনে পায়জামা-পাঞ্জাবি, মাথায় টুপি, মুখে দাড়ি। লোকটা পিউকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো। সে নিজেও পাশের চেয়ারে বসলো। হুজুরকে উদ্দেশ করে বললো,

    -  আপনার কাজ শুরু করেন...দ্রæত সারবেন।

    হুজুর দোয়া-দরুদ পড়তে শুরু করলেন। পিউ অবাক হয়ে তাকালো তার দিকে। হুজুরের দোয়া-দরুদ পড়ার কারণটা ঠিক ধরতে পারলো না। একবার পাশে বসা লোকটার দিকে তাকালো, আরেকবার সামনে বসা হুজুরের দিকে তাকালো। অন্য দুজন লোক ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে গার্ডের মতো। মনে মনে হতাশ হলো সে। ভেবেছিল পুলিশ চলে এসেছে। চারদিকটা ঘেরাও করে ফেলেছে। আত্মসমর্পণ করতে মাইকিং করা হয়েছে। সেজন্যই হয়তো ওকে রুমের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। ধপ করে মনের মধ্যে জ্বলতে থাকা ক্ষীণ আশার আলো নিভে গেল। কিছুক্ষণ পর হুজুর ওর দিকে তাকিয়ে বললেন,

    -  বলেন কবুল...

    ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো পিউ। সে কেন ‘কবুল’ বলবে? ওর পাশে বসে থাকা লোকটা বললো,

    - কী হলো? বলো...

    -  আমি কেন কবুল বলবো?

    হুজুর বললেন,

    -  আমি এখানে বিয়ে পড়াতে আসছি। আপনার সাথে জনাবের শুভ বিবাহ। আপনি এই বিয়েতে সম্মতি দিন। বলেন, কবুল...

    -  হোয়াট ননসেন্স! কিসের বিয়ে? আমি কেন বিয়ে করবো তাকে? সে  আমাকে কিডন্যাপ করেছে।

    হুজুর আঁতকে উঠলেন। বললেন,

    -  হায় আল্লাহ! মেয়ের সম্মতি না থাকলে তো এই বিয়ে পড়ানো সম্ভব না।

    লোকটার চেহারায় কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। ‘বিয়ে পড়ানো সম্ভব না’ শুনে সে শান্ত ভঙ্গিতে একটা পিস্তল বের করে টেবিলের ওপর রাখলো। হুজুরকে বললো, এখন কি বিয়ে পড়াতে কোনো আপত্তি আছে? নাকি ‘কবুল’ বলতে আপত্তি আছে?

    পিস্তল দেখে হুজুরের চোখজোড়া ঠিকরে বের হবার মতো অবস্থা হলো। তিনি হতবিহŸল ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলেন পিস্তলের দিকে। পিউয়ের অবস্থাও করুণ। মুভিতে অনেকবার পিস্তল দেখলেও জীবনে এই  প্রথমবারের মতো চোখের সামনে দেখলো সেটা। দেখেই দরদর করে ঘামতে শুরু করলো সে। ঢোঁক গিলে লোকটার দিকে তাকালো ভয়ে ভয়ে। ‘কবুল’ না বললে কি এই লোকটা ওকে গুলি করে মারবে? লোকটা কি ওকে তুলে এনেছে বিয়ে করবার জন্য? বিয়ে করা কি এতোই সহজ? কে এই লোক? কেন ওকে বিয়ে করতে চায় সে? হুজুর আবার নতুন করে দোয়া-দরুদ পড়তে শুরু করেছেন। দ্রæতগতিতে দোয়া পড়তে গিয়ে তার গলা কেঁপে যাচ্ছে বারবার। তারপরও তিনি থামলেন না।

    দোয়া-দরুদ পড়ে পিউকে বললেন,

    -  বলেন, কবুল...

    পিউ তখন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে পিস্তলের দিকে। এবারে সে হুজুরের দিকে তাকালো। হুজুর আবারও বললেন,

    -  বলেন, কবুল...

    রুমটায় ভ্যাপসা গরম। শাড়ি পরে খোলা চুলে ঘেমে-নেয়ে গিয়েছে পিউ। খুব অস্থির লাগছে ওর। কিছুক্ষণ আগে পিস্তলের ভয় দেখিয়ে ওকে বিয়ে করেছে লোকটা। পিস্তলের মুখে তিনবার ‘কবুল’ বলতে বাধ্য হয়েছে সে। এমনকি কাজির রেজিস্টার খাতায় সাইন করেছে। আবার মোনাজাতের জন্য হাতও তুলেছে। বিয়ে পড়ানোর পর ওকে এই রুমে এনে আবার হাত-পা বেঁধে রেখে গিয়েছে লোকটা। চোখ বন্ধ করে ফেললো পিউ। মনে মনে বললো, ‘আল্লাহ্! এটা যেন সত্যিই একটা দুঃস্বপ্ন হয়।’ দুঃস্বপ্নই হয়তো; এক্ষুনি চোখ মেলে নিজেকে রুমের বিছানায় দেখতে পাবে। কিছুক্ষণ পর চোখ খুললো সে। নাহ্...এখনো হাত-পা বাঁধা অবস্থাতেই বসে আছে। তার মানে এটাই বাস্তব! ভেবেছিল, লোকটা টাকার জন্য কিডন্যাপ করেছে ওকে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ঘটনা অন্যকিছু। কী হতে পারে?

    অনেকক্ষণ হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বসে থাকতে থাকতে ঝিমুনি চলে এসেছিল পিউয়ের। দরজা খোলার শব্দে চমকে উঠলো সে। লোকটা রুমে ঢুকে লাইট অন করেছে। তার হাতে বিরিয়ানির প্যাকেট আর কোকের ক্যান। একটা চেয়ার টেনে ওর সামনে বসলো সে। বিরিয়ানির প্যাকেট খুলে কিছুটা হাতে তুলে ওর মুখের সামনে ধরলো। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো,

    -  আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি...তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।

    ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো পিউ। এখনো পুরোপুরি ধাতস্থ হতে পারেনি সে। ঘুরেফিরে কেবলই মনে হচ্ছে কোনো দুঃস্বপ্ন দেখছে। লোকটা আবার বললো,

    -  তোমার হাতের দড়ি খোলা সম্ভব না। তাই খাইয়ে দিচ্ছি। জলদি খেয়ে নাও। অনেক কাজ পড়ে আছে আমার।

    এবারে পিউ সত্যিকার অর্থেই হতভম্ব হলো। এতোবড় একটা ঘটনা ঘটিয়েও লোকটা এমনভাবে কথা বলছে যেন কিচ্ছু হয়নি। ফাজলামোর সীমা থাকা দরকার। সে চোখ-মুখ শক্ত করে বললো,

    -  আমি খাবো না। আপনি দড়ি খুলুন। আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন।

    -  এখন থেকে এটাই তোমার বাসা। এখানেই থাকবা তুমি।

    -  কেন?

    -  কারণ, আজ থেকে তুমি আমার ওয়াইফ। আর বিয়ের পর মেয়েরা তাদের হাজব্যান্ডের বাড়িতেই থাকে।

    -  এই বিয়ে আমি মানি না। আপনি আমাকে কিডন্যাপ করেছেন। পিস্তলের ভয় দেখিয়ে ‘কবুল’ বলতে বাধ্য করেছেন। হুজুর তো বিয়ে পড়াতেই চাননি। তাকেও ভয় দেখিয়েছেন আপনি। এভাবে জোর করে বিয়ে হয় না...

    -  এতো কথা শোনার সময় নাই আমার। কীভাবে বিয়ে হইছে সেটা নিয়ে পরেও ভাবা যাবে। আপাতত মাথায় ঢোকাও, তুমি আমার ওয়াইফ। আমি তোমার হাজব্যান্ড। এবং আজ থেকে এখানেই থাকবা তুমি। ব্যস...আর কোনো কথা শুনতে চাই না। হাঁ করো...ল²ী মেয়ের মতো খেয়ে নাও।

    -  খাবো না আমি...ডিড ইউ হিয়ার মি? আ-মি খা-বো না...দ্যাট মিনস খাবোই না।

    জিদ ধরে বসে রইলো পিউ। লোকটাও নাছোড়বান্দা। জোর করে মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিলো সে। প্রায় সাথে সাথে পিউ থু দিয়ে খাবার ফেলে দিলো। কিছুটা খাবার ছিটকে গিয়ে লোকটার মুখে লাগলো। একমুহূর্ত চুপ করে রইলো সে। তারপরই উঠে দাঁড়িয়ে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো পিউয়ের গালে। থাপ্পড় খেয়ে মাথা ঘুরে উঠলো পিউয়ের। লোকটা চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,

    -  ফার্স্ট অ্যান্ড লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি তোমাকে। আজকের পর থেকে আমার সাথে ঘাড় ত্যাড়ামি করলে এর পরিণাম কিন্তু খুব খারাপ হবে। এতোক্ষণ পর্যন্ত আমার ভালোটাই দেখছো, খারাপটা দেখো নাই। বেশি ত্যাড়ামি করলে সেটাও দেখাবো।

    মুখ ঝামটা মেরে পিউ বললো,

    -  কি যে ভালো দেখাচ্ছেন, তা তো দেখতেই পাচ্ছি। কথা নেই বার্তা নেই ফট করে আমাকে কিডন্যাপ করেছেন। পিস্তলের ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছেন। এর মধ্যে কি ভালো দেখালেন শুনি?

    এক হাতে ওর গলা চেপে ধরলো লোকটা। বললো,

    -  মুখের কাপড় খুলে দিছি বলে মুখে খই ফুটতে শুরু করছে!

    কঁকিয়ে উঠলো পিউ,

    -  ছাড়–ন প্লিজ। আমার গলায় ব্যথা লাগছে।

    -  এটুকুতেই ব্যথা লাগছে! এখনো তো ভালোমতো চেপে ধরলামই না।

    -  প্লিজ ছাড়–ন...ব্যথা পাচ্ছি খুব...

    -  ভালোমানুষের বাচ্চার মতো চুপচাপ খাওয়া শেষ করো। নইলে এমন জোরে গলা চেপে ধরবো, আত্মা ওপরের দিকে চলে যাবে একদম।

    লোকটা হাত সরাতেই কাশতে শুরু করলো পিউ। হাত বেঁধে রাখার কারণে গলা স্পর্শ করতে পারছে না। লোকটা ওর সামনে আবারও খাবারের নলা তুলে ধরেছে। কোনোরকম আপত্তি না করে খেতে শুরু করলো সে। খেতে গিয়ে গলায় ব্যথা লাগছে অনেক। গিলতেও অসুবিধে হচ্ছে। তারপরও যতো দ্রæত সম্ভব খেতে লাগলো। থাপ্পড়টা অনেক জোরে লেগেছে। কান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মাথার ভেতর শোঁ শোঁ শব্দ হচ্ছে। ভয় লাগছে খুব। কথা না শুনলে কি সত্যিই ওকে গলা টিপে মারবে লোকটা?

    দুই মিনিটের মধ্যে খাওয়া শেষ করে ফেললো পিউ। লোকটা ওর দিকে কোকের ক্যান এগিয়ে দিলে সেটাও দ্রæত খেয়ে নিলো। একটা থাপ্পড় আর একটুখানি গলা চেপে ধরায় মনে হচ্ছে অর্ধেক আয়ু শেষ হয়ে গিয়েছে। আর না...আর যা কিছুই হোক না কেন, এই লোকের সাথে কোনোভাবেই তর্কাতর্কি করা যাবে না। বিরিয়ানির খালি প্যাকেট আর কোকের ক্যান নিয়ে লোকটা চলে গেল। যাবার আগে লাইট অফ করে দিলো। পিউয়ের চোখের সামনে একরাশ অন্ধকার নেমে এলো। কিছুক্ষণ পর ঢুলতে শুরু করলো সে। ঘুমে চোখ ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক চেষ্টা করেও চোখ খুলে রাখতে পারছে না।

    ওবায়েদ সাহেব বসার রুমের সোফায় বসে কথা বলছেন ফোনে। মোবাইলে, ল্যান্ডফোনে একের পর এক ফোন আসছে। কাল রাত থেকে পিউ নিখোঁজ। মেয়েটার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি কখন থেকে নিখোঁজ সেটাও ঠিকমতো বলতে পারছে না কেউ। গতকাল রাতেই থানায় গিয়ে জিডি করেছেন তিনি। জিডি করার পরই বাসায় এসেছিল পুলিশ। উপস্থিত সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঠিক কখন থেকে পিউকে দেখা যাচ্ছে না, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। একেকজন একেক রকম কথা বলছে। একজন বললো, পিউ পারলার থেকে ফেরেনি। গাড়ির ড্রাইভার বলেছে, পিউ বাসায় ফিরেছে। শাহানাও একই কথা বলেছেন। রহিমা বুয়া জানিয়েছে, সে পিউকে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় যেতে দেখেছে। দোতলায় যাবার পর আর কেউ দেখেনি পিউকে।

    পিউয়ের নিখোঁজ হবার ব্যাপারটা সবার আগে শাহানার নজরে আসে। ততোক্ষণে তারা সবাই হলুদের অনুষ্ঠানে চলে গিয়েছেন। অনেকটা সময় মেয়েকে না দেখে তার টনক নড়ে। তিনি পিউকে খুঁজতে শুরু করেন। উপস্থিত সবাইকে ওর কথা জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু কেউ কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। তখন থেকেই খোঁজাখুঁজি শুরু। পিউয়ের মোবাইলে অনেকবার ফোন করেছিলেন তিনি। কেউ ফোন রিসিভ করেনি। বাসায় ফোন করেও পিউয়ের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তারপরই জানাজানি হয়েছে যে পিউকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

    বিয়ে উপলক্ষে আত্মীয়স্বজন সবাই এসেছে বাসায়। কারো মনে এখন আর বিয়ের আনন্দ নেই। সবাই পিউকে নিয়ে চিন্তিত। মেয়ের চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন শাহানা। অনেক কান্নাকাটি করেছেন। কয়েকবার জ্ঞানও হারিয়েছেন। প্রেশার বেড়েছে তার। মাথায় পানি ঢালা হয়েছে। প্রেশার ও ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়েছে। তারপরও ঘুমাতে পারেননি তিনি। ঘুমের ঘোরে কান্নাকাটি করেছেন সারারাত। কোথায় গেল পিউ? মেয়েটা খুব ল²ী; কখনো তার অবাধ্য হয়নি। তাকে না জানিয়ে কোথাও এক পা বাড়ায়নি। অথচ সেই মেয়ে নিখোঁজ হয়ে গেল।

    রাতেই পরিচিত সবার বাসায় খোঁজ নেয়া হয়েছে। নীতুর বাসায় ফোন করে নীতুকে পাওয়া যায়নি। পাপনের হলুদের অনুষ্ঠানে যাবার নাম করে বাসা থেকে বেরিয়েছিল সে। মোবাইল বন্ধ করে রেখেছিল। সারারাত পার করে সকালে বাড়ি ফিরেছে। পুলিশ তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। পিউয়ের কোনো খবর সে দিতে পারেনি। গতকাল সে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। রাতে বয়ফ্রেন্ডের সাথেই ছিল। ওর মোবাইলে অনেকগুলো মিসকল অ্যালার্ট আর মেসেজ পাওয়া গিয়েছে। পারলার থেকে ফেরার পথে অনেকবার ওকে ফোন করেছিল পিউ; মেসেজও পাঠিয়েছিল। ড্রাইভারও এমনটাই জানিয়েছে। পিউয়ের মোবাইলটা শেষ পর্যন্ত পাওয়া গিয়েছে তার বেডরুমেই। ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখা ছিল সেটা।

    প্রাথমিক তদন্ত শেষ হবার পর পুলিশ নিশ্চিত হলো, দোতলা থেকেই গায়েব হয়েছে পিউ। ওর রুমের একটা জানালা খোলা ছিল। জানালার গ্রিলটা নড়বড়ে ধরনের। স্ক্রুগুলো তেমন টাইট করে লাগানো হয়নি। অনুমান করা হচ্ছে, কেউ একজন স্ক্রু খুলে গ্রিলটা সরিয়েছিল। তারপর আবার লাগিয়ে রেখেছে। তবে কোথাও পিউ বাদে অন্য কারো হাতের বা পায়ের কোনো ছাপ পাওয়া যায়নি। রুমটাও একেবারে ঠিকঠাক আর গোছানো। কোনোরকম ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই। শুধু ড্রেসিং টেবিলের ওপর কিছু মেকআপ আর জুয়েলারি অগোছালো হয়ে আছে। হয়তো পিউ নিজেই পালিয়েছে। বাড়িতে কড়া সিকিউরিটি সিস্টেম থাকার কারণে বাসা থেকে বের হওয়াটা ওর পক্ষে সহজ ছিল না। তাই জানালার গ্রিল খুলে পালিয়েছে। বাইরে থেকে কেউ হেল্প করেছিল। নইলে স্ক্রু খুলে জানালার গ্রিল সরাবার কাজটা ওর একার পক্ষে সম্ভব নয় কোনোভাবেই। তাছাড়া স্ক্রু খুলতে স্ক্রু-ড্রাইভার অথবা প্রয়োজনীয় যেসব যন্ত্রপাতি লাগে, সেসব কিছুই ওর রুমে পাওয়া যায়নি।

    পুলিশের সন্দেহ, বাইরে থেকে হেল্প করা মানুষটা হয়তো পিউয়ের বয়ফ্রেন্ড। তার সাথেই পালিয়েছে সে। কিন্তু শাহানা আর ওবায়েদ সাহেব সেটা নাকচ করে দিলেন। দুজনই জোর দিয়ে জানালেন, পিউয়ের কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই। তাদের মেয়ে উঠতি বয়সের কিশোরী হলেও মনমানসিকতার দিক থেকে অনেকটাই ছেলেমানুষ এবং তাদের অনুগত ছিল। বিশেষ করে মায়ের খুব ন্যাওটা ছিল সে। শাহানা মেয়ের সাথে খুব খোলামেলাভাবে মিশতেন। মেয়ের প্রতিটা গল্প জানেন তিনি। এমনকি নীতুর বয়ফ্রেন্ডের কথাও জানেন। যদি তার মেয়ের কোনো বয়ফ্রেন্ড থাকতো তাহলে তিনি অবশ্যই জানতেন। না জানালেও মেয়ের কথাবার্তা বা আচরণে কিছুটা টের পেতেন। গল্পের ছলে কোনো না কোনোভাবে জানতে পারতেন তিনি। তাছাড়া নীতু-সহ স্কুলের অন্য বান্ধবীরা এবং সমবয়সী কাজিনরা কেউ এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেনি পুলিশকে। তাছাড়া পালাবার কোনো একটা কারণ তো অবশ্যই থাকবে। যেখানে বাসায় একটা বিয়ে হচ্ছে এবং গতকাল হলুদের অনুষ্ঠানে যাবার প্রস্তুতিও নিয়েছিল পিউ, সেখানে হুট করে পালিয়ে যাওয়াটা একদমই বেমানান।

    পুলিশের পরবর্তী সন্দেহ, পিউকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। ওবায়েদ সাহেব বাংলাদেশের প্রথম সারির একজন ব্যবসায়ী। কোটি কোটি টাকার ব্যবসার সাথে জড়িত তিনি। তার যেমন বন্ধু আছে, তেমনি শত্রæও আছে। শত্রæতার জের ধরে পিউকে কিডন্যাপ করার সম্ভাবনা একদমই উড়িয়ে দেয়া যায় না। তবে ওবায়েদ সাহেব তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেননি এ ব্যাপারে। এমন কোনো সূত্র দিতে পারেননি, যার পিছু নিয়ে এগোতে পারে পুলিশ। তিনি একজন বড় ব্যবসায়ী হলেও আন্তরিক ব্যবহারের কারণে সবার সাথেই কমবেশি ভালো সম্পর্ক আছে। তার মেয়েকে কিডন্যাপ করতে পারে এমন কোনো শত্রæ আছে বলে তার মনে হয় না। তিনি নিজেই ইনফরমার লাগিয়ে সম্ভাব্য জায়গায় খোঁজ নিয়েছেন। পিউ সম্পর্কিত কোনো খবর তার কাছে এখনো আসেনি। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, পিউকে কিডন্যাপ করলে ফোন আসবে বাসায়। অথচ প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা হয়ে গিয়েছে; এখনো ফোন আসেনি কিডন্যাপারের। তবে পুলিশ এখনো আশায় আছে, কিডন্যাপার অবশ্যই ফোন করবে। এমনিতেও তারা বসে নেই। হাতে খুব বেশি তথ্য না থাকলেও তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।

    আজ পাপনের বিয়ের দিন। মোনাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করে পাবার দিন। আর আজই পিউকে গায়েব হতে হলো! গায়েব হবার কি আর দিনক্ষণ পেল না বোনটা? খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে তার। সে একরকম নিশ্চিত, পিউয়ের বয়ফ্রেন্ড ছিল। হয়তো ছেলেটা ওদের সোসাইটির নয় অথবা ওদের সম্পর্ক কেউ মেনে নেবে না, তাই কাউকে কিছু না বলে পালিয়েছে। পালাবার আগে ঘুণাক্ষরেও কাউকে কিছু বুঝতে দেয়নি। মেজাজ খারাপের পাশাপাশি টেনশনও হচ্ছে পাপনের। পিউ তার খুবই আদরের বোন। কার সাথে, কোথায় পালিয়েছে কে জানে। বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালানোর খবরটা নিশ্চিতভাবে জানতে পারলে কিছুটা হলেও শান্ত হতো মন। যদি সত্যিই কেউ কিডন্যাপ করে ওকে? অথবা ওর বয়ফ্রেন্ডের মনে যদি কুমতলব থাকে?

    খবর পেয়ে মোনার বাবা-মা বাসায় এলেন। তাদের সাথে দেখা করার মতো অথবা দুদÐ কথা বলার মতো অবস্থায় নেই শাহানা। কড়া ঘুমের মেডিসিন খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে তাকে। প্রেশার ক্ষণে ক্ষণে ওঠানামা করছে। যে-কোনো মুহূর্তে হাসপাতালে নিতে হতে পারে তাকে। সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। ওবায়েদ সাহেবও খুব একটা স্বাভাবিক অবস্থায় নেই।তার বিধ্বস্ত চেহারা দেখে মনে হচ্ছে, কেউ তার কলিজাটাই ছিঁড়ে নিয়ে গিয়েছে। তিনি চেষ্টা করছেন শান্ত থাকতে। মাথা খাঁটিয়ে মেয়েকে খুঁজে বের করার উপায় খুঁজছেন। মোনার বাবা-মাকে তিনি অনুরোধ করলেন, পাপন-মোনার বিয়েটা যেন কয়েক মাস পিছিয়ে দেয়া হয়। তাদেরও রাজি না হয়ে উপায় নেই। যে বাড়ির মেয়ে হুট করে নিখোঁজ, সে বাড়িতে বিয়ের আনন্দ আসবে কী করে?

    বিয়ে পেছাবার কথা শুনেই মূলত মেজাজ খারাপ হয়েছে পাপনের। বিয়ে পেছাবার সিদ্ধান্তটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সে। বোনের জন্য টেনশন হচ্ছে খুব; পাশাপাশি মোনাকে হারাবার ভয়টাও জেঁকে বসেছে মনে। আজ শুধু কাজি ডেকে বিয়েটা পড়ালেই হতো। পরে না হয় সময় করে রিসিপশন করা যেতো। তাহলে আর মোনাকে হারাবার ভয় থাকতো না। এমনিতেই জুনায়েদ লেগে আছে পেছনে। বিয়ে ভাঙার পাঁয়তারা করছে। ওকে ফোন করেছিল ছেলেটা; কয়েকবার দেখাও হয়েছে। তার বক্তব্য, মোনা তার হবু বউ। আট বছরের প্রেম তাদের। বিয়েও ঠিক হয়ে আছে পারিবারিকভাবে। কিন্তু মোনা বলেছে, জুনায়েদ অনেকদিন ধরে তার পেছনে লেগে আছে। সুযোগ পেলেই রাস্তাঘাটে উত্ত্যক্ত করে। অনেকবার প্রপোজ করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তবু হাল ছাড়েনি। এখন বিয়ে ভাঙার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। আজেবাজে কথা ছড়াচ্ছে। এই নিয়ে জুনায়েদের সাথে পাপনের খুব ঝামেলা হয়েছে। পাপন ওকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তারপরও দমে যায়নি সে। মোনার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল। মোনার বাবা-মা ওকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। মেয়ের পছন্দের ওপর আর কোনো কথা নেই তাদের। তাছাড়া পাপনের মতো সোনার টুকরো ছেলে হাতছাড়া করার প্রশ্নই উঠে না। মূলত জুনায়েদের কারণেই পাপনের ভয় হচ্ছে অনেক। এসব আজেবাজে কথা ওবায়েদ সাহেবের কানে গেলে তিনি নড়েচড়ে বসবেন। বিয়ের ব্যাপারে নতুন করে ভাবতে শুরু করবেন। বিয়েটা ভেঙেও যেতে পারে তখন।

    ঘুম ভেঙে পিউ নিজেকে আবিষ্কার করলো একটা অপরিচিত রুমের বিছানায়। চারদিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলো কোথায় আছে সে। পরক্ষণেই মনে পড়লো সব। ধড়মড়িয়ে উঠে বসলো বিছানায়। দেয়ালে ঝোলানো রেডিয়াম ঘড়িতে পৌনে নয়টা বাজে। সেটা কী করে সম্ভব? গতকাল রাতেই সাড়ে এগারোটা বাজতে দেখেছিল। তবে কি পুরো একটা দিন ঘুমিয়েছে সে? এখন দিন নাকি রাত, সেটা বোঝার কোনো উপায় নেই। জানালাগুলোয় ভারী পর্দা লাগানো। রুমে টেবিল ল্যাম্প জ্বলছে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল ঠিক মনে পড়ছে না ওর। মাথাটা খুব ঝিমঝিম করছে। যতোদূর মনে করতে পারলো, লোকটা ওকে খাইয়ে চলে যাবার পর প্রচÐ ঘুম পেয়েছিল। বাঁধা অবস্থায় চেয়ারে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিল সে। তাহলে বিছানায় এলো কী করে?

    টেবিল ল্যাম্পের আবছা আলোতে চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো পিউ। জমকালো কারুকাজের পালঙ্কে বসে আছে সে। পালঙ্কের একপাশে বেডসাইড ড্রয়ার, অন্যপাশে ড্রেসিং টেবিল। বিশাল সাইজের আলমারি আর মাঝারি সাইজের ড্রয়ারও আছে। ড্রয়ারের পাশেই একটা গোলাকার টেবিল। টেবিলের সাথে দুটো চেয়ার। ফার্নিচারগুলো সব মেহগনি কাঠ দিয়ে একই ডিজাইনে তৈরি। রুমটা সাইজে বড় হওয়ায় বেশ খোলামেলা লাগছে। তিন পাশের দেয়ালে তিনটা জানালা। আলমারির অন্যপাশে একটা দরজা আছে। ওটা বোধহয় ওয়াশরুম।

    ওয়াশরুমের কথা মনে পড়তেই টনক নড়লো পিউয়ের। ওয়াশরুমে যাওয়া দরকার। গতকাল বিকেলে পারলার থেকে ফেরার পর ওয়াশরুমে গিয়েছিল। তারপর আর যাওয়া হয়নি। পালঙ্ক থেকে নামতে গিয়ে সে লক্ষ করলো তার পরনে কিছু নেই। শাড়ি, বøাউজ, পেটিকোট সবকিছু পালঙ্কে পায়ের কাছে ছড়ানো-ছিটানো। গহনাগুলো ড্রেসিং টেবিলের ওপর এলোমেলো করে রাখা। হকচকিয়ে গেল সে। ভীত চোখে নিজের শরীরের দিকে আরো একবার তাকালো। রাতে কী হয়েছিল কিচ্ছু মনে নেই তার। লোকটা বোধহয় কোকের ক্যানে কিছু মিশিয়ে দিয়েছিল। তাই সারারাত বেহুঁশের মতো ঘুমিয়েছে সে। এই সুযোগে লোকটা ওর সতীত্ব কেড়ে নিয়েছে!

    ‘সতীত্ব’ সম্পর্কে তেমন পরিষ্কার ধারণা নেই পিউয়ের। বান্ধবী আর সমবয়সী কাজিনদের কাছে হালকাভাবে কিছু শুনেছে। তবে নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে অন্তত এটুকু বুঝতে পারলো, যা কিছু হয়েছে তা আগে কখনো হয়নি। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে রইলো সে। এমন পরিস্থিতিতে আগে কখনো পড়েনি। তাই কাঁদবে নাকি এখান থেকে বের হবার চেষ্টা করবে বুঝতে পারলো না। আচমকাই যেন সবকিছু উলটে পালটে গিয়েছে। ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে বেশ আনন্দে ছিল। সেখান থেকে চলে এলো এই বদ্ধরুমে। এখন পর্যন্ত কেউ ওকে উদ্ধার করতেও এলো না। কবে ছাড়া পাবে সে? কবে ফিরতে পারবে আব্বু-আম্মুর কাছে? একটা লোক ওকে কিডন্যাপ করলো। জোরজবরদস্তি করে, ভয় দেখিয়ে বিয়ে করলো। রাতের অন্ধকারে ওকে বিবস্ত্র করলো। কেউ কিচ্ছু বলার নেই! কারো কী কিচ্ছু করার নেই? অবশ্যই আছে। লোকটা যা ইচ্ছে তাই করতে পারে না ওর সাথে। তার সে অধিকার নেই।

    বেশ কিছুক্ষণ ধরেই প্রাকৃতিক ডাকের তাগিদ পাচ্ছিল পিউ। এবার সেটা চাপে পরিণত হলো। পালঙ্ক থেকে নামতে গিয়ে সে টের পেল তার কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত প্রচÐ ব্যথা। অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ালো সে। গতকাল শক্ত করে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল ওকে। সেজন্যই কি এতো ব্যথা লাগছে? নাকি অন্য কোনো কারণ আছে? উরুতে শুকনো রক্তের দাগ দেখে ভয়ে কুঁকড়ে গেল পিউ। উরুসন্ধিতে প্রচÐ ব্যথা। রক্তের ধারা সেখান থেকেই বেরিয়ে এসেছে। রক্তের দাগ দেখেই সে নিশ্চিতভাবে বুঝে গেল, রাতে কিছু একটা হয়েছে ওর সাথে। কোনোরকমে পেটিকোট, বøাউজ আর অন্তর্বাস পরে নিলো সে। ধীর পায়ে হেঁটে গেল ওয়াশরুমের দিকে। ওয়াশরুমের দরজা খুলতেই লক্ষ্য করলো, একটু উঁচুতে ভেন্টিলেটর। সেখান থেকে এক পশলা রোদ উঁকি দিচ্ছে। তার মানে সকাল বা দিনের বেলা এখন! তাহলে রুমটা অন্ধকার কেন? তিনটা জানালা রুমে; অথচ আলোর কোনো নাম-নিশানা নেই। যতোই ভারী পর্দা ঝোলানো থাকুক না কেন, কিছুটা হলেও তো আলোর চিহ্ন পাবার কথা। হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হলো পিউ। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সরাসরি জানালার দিকে এগিয়ে গেল। পর্দা সরিয়ে দেখলো পাল্লাগুলো কাঠের তৈরি। এজন্যই রুমে কোনো আলো নেই। জানালাগুলো খোলার চেষ্টা করলো সে; পারলো না। ছিটকিনি খুলতে পারলেও পাল্লাগুলো নড়ছে না একদম। লোকটা নিশ্চয়ই ওগুলো স্থায়ীভাবে আটকে দিয়েছে। তাছাড়া হাতের কবজিতে ব্যথা করছে খুব। দড়ির দাগ বসে লাল হয়ে আছে। তাই হাতে খুব একটা জোর দিতে পারলো না। হঠাৎ পাশের রুমে শব্দ হতেই সচকিত হয়ে উঠলো সে। ত্বরিতগতিতে পালঙ্কে উঠে শুয়ে পড়লো। ঘুমের ভান করে পড়ে রইলো চুপচাপ। কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে গেল। পায়ের শব্দ এগিয়ে এলো পালঙ্কের কাছে। পরমুহূর্তেই ঘাড়ের কাছে গরম নিশ্বাস টের পেল সে। কানের কাছে শুনতে পেল লোকটার গলা,

    -  মহারাণীর কি এখনো ঘুম ভাঙে নাই? বেলা হয়ে গেছে তো...ওঠো...

    পিউয়ের চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে মুখের আশপাশে। লোকটা চুল সরিয়ে দিলো মুখের ওপর থেকে। বললো,

    -  পিউ...অ্যাই পিউ...পিউ, শুনতে পাচ্ছ? নাশতা নিয়ে আসছি...উঠে পড়ো।

    নড়লো না পিউ। গভীর ঘুমের ভান করলো। এবার লোকটা ওর কোমরে আলতো করে চাপ দিলো। প্রায় সাথে সাথেই ধড়মড়িয়ে উঠে বসলো সে। ওর অপ্রস্তুত চেহারা দেখে লোকটা হাসলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওর ঠোঁটে চুমু দিলো আলতো করে। হাসিমুখে বললো,

    -  আমি জানতাম তুমি ঘুমাও নাই।

    -  (নিশ্চুপ)

    -  ওদিকটায় ওয়াশরুম। যাও, হাত-মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।

    পিউ ইতস্তত করতে লাগলো। লোকটার পাশেই ওর শাড়ি! এই লোকের সামনে শাড়ি ছাড়া কীভাবে বিছানা ছেড়ে উঠবে সে? ওর অস্বস্তিটা বুঝতে পারলো লোকটা। শাড়িটা হাতে নিয়ে বললো,

    -  আমি তোমার হাজব্যান্ড। আমার সামনে এতো লজ্জা পাবার কিছু নাই। যেভাবে আছ, সেভাবেই যাও। ফ্রেশ হয়ে এসে শাড়ি পরো।

    ওয়াশরুমে চলে গেল পিউ। দরজার ছিটকিনি আটকে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ। ভেন্টিলেটরটা বেশ উঁচুতে। ওটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে আকাশ ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। চিৎকার করলে হয়তো পাশের বাড়ির কেউ শুনতে পাবে। তার আগে বাইরের দিকটা দেখতে পারলে ভালো হতো। তাছাড়া লোকটা এখন রুমে আছে। চিৎকার করলে সেও শুনতে পাবে। তখন নির্ঘাৎ দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকবে।

    দরজায় টোকা দেবার শব্দ শুনে চমকে গেল পিউ। দরজার ওপাশ থেকে লোকটা বললো,

    -  আর কতোক্ষণ লাগবে তোমার? বের হয়ে আসো শিগগির।

    চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে বের হয়ে এলো পিউ। ওকে দেখে শাড়ি এগিয়ে দিলো লোকটা। বললো,

    -  শাড়ি পরতে জানো? গতকাল কি নিজেই পরছিলা?

    কোনো কথা না বলে পিউ শাড়িটা হাতে নিয়ে পরতে শুরু করলো। আড়চোখে লক্ষ করলো, লোকটা ওর দিকে তাকিয়ে আছে। শাড়ি পরা শেষ হলে একটা চেয়ার টেনে বললো,

    -  এখানে বসো। নাশতা খেয়ে নাও।

    চেয়ারে বসে পড়লো পিউ। খুব অস্থির লাগছে ওর। হাত-পা কাঁপছে খুব। ওকে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে দেখে লোকটা এগিয়ে এসে পাশের চেয়ারে বসলো। বললো,

    -  আমি খাওয়ায়ে দেব?

    পিউ উত্তর দিলো না। লোকটাও উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে খাবারের দিকে হাত বাড়ালো। পেটে ক্ষুধা থাকলেও খাওয়ার ইচ্ছে নেই পিউয়ের। কতোক্ষণে এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাবে সেটাই মাথায় ঘুরছে শুধু। তবু খেতে শুরু করলো চুপচাপ। খেতে গিয়ে বারবার গলায় ঠেকলো। লোকটা যদি আবার থাপ্পড় মারে, যদি গলা চেপে ধরে আবার, সেই ভয়ে জোর করে খেয়ে নিলো। খাওয়ার মাঝখানে লোকটাকে বলতে শুনলো,

    -  মহারাণীর তো দেখি রাজকপাল। বিয়ের আগে নিশ্চয়ই মা মুখে তুলে

    Enjoying the preview?
    Page 1 of 1