নীহারিকা
By সৌরভ নাথ
()
About this ebook
“নীহারিকা” বারোটি ছোট গল্পের সংকলন।সৌরভ নাথ (1লা এপ্রিল 1984) একজন কলা স্নাতক, একটি কম্পিউটার সেন্টারের ফ্যাকাল্টি সদস্য হিসাবে তার ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। পরে একটি জাতীয়করণকৃত ব্যাংকে যোগ দেন
Related categories
Reviews for নীহারিকা
0 ratings0 reviews
Book preview
নীহারিকা - সৌরভ নাথ
নীহারিকা
১
সুশান্ত বাবু বললেন, 'ট্রান্সফার্ড এপিথেট হল একটি ফিগার অফ স্পিচ যাতে যে মডিফায়ার থাকে, সেটি সাধারণত একটি এডজেক্টিভ হয়ে থাকে, সেটি সরাসরি যে ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝাচ্ছে, তাকে কোয়ালিফাই না করে অন্য একটি নাউনকে কোয়ালিফাই করে।'
আমি মন দিয়ে শুনছি আর বোঝার চেষ্টা করছি। বোঝার চেষ্টা করছি এই কারণেই যে, আমি যেন ঠিক ঠাক ব্যাপারটাকে বুঝে উঠতে পারছি না। বলতে লজ্জা নেই, পড়াশোনায় আমি খুব একটা ভাল ছেলে কোন কালেই ছিলাম না। কোনও রকমে একটা গড় পড়তা নম্বর নিয়ে প্রতি বছর টেনে টুনে পাশ করি। হায়ার সেকেন্ডারিতে যা হোক করে সেকেন্ড ডিভিশনে পাশ করেছি। কিন্তু গ্রাজুয়েশনে যে কিভাবে ওতরাবো সেটাই ভাবছি। সুশান্ত বাবু না থাকলে বোধ হয় আমার মাধ্যমিকেও পাশ করা সম্ভব হত না। সুশান্ত বাবুর কথায় আমাদের স্কুলের অঙ্কের মাষ্টার মশাই বিনোদ বাবু আমাকে মাধ্যমিকের আগে দু মাস অঙ্ক করাবার ভার নিয়েছিলেন। তিনি প্রথম দিনেই আমার অঙ্কের অবস্থা দেখে এমন মুখভঙ্গি করলেন, যেন তাঁর বাড়িতে কোনও ইঁদুর সপ্তা খানেক আগে মরে পচে আমার খাতার উপর পড়ে রয়েছে। নাকটা সিটকে তিনি বললেন, 'ঈশ! এই তোর অঙ্কের অবস্থা? কি করে তুই মাধ্যমিকে অঙ্কে পাশ করবি রে?
বিনোদ বাবুকে উত্তর দেবার মত কোনও ভাষা আমার জানা ছিল না। তাই আমি চুপ করেই রইলাম। উত্তরটা অবশ্য কিছুক্ষণ পরে বিনোদ বাবু নিজেই দিলেন। তিনি বললেন, 'গাধা পিটিয়ে ঘোড়া আমি অনেককে করেছি। কিন্তু তুই তো দেখছি একেবারে গাধারও অধম। তুই বরং এক কাজ কর, এই কয়েকটা অঙ্কে আমি দাগ দিয়ে দিলুম, এক মাস ধরে তুই বরং অঙ্কগুলো মুখস্থ কর। দ্যাখ, পাশ করতে পারিস কিনা। এই ইলেভেন্থ আওয়ারে তোকে সেই গোরা থেকে অঙ্ক শেখানো কোনও মতেই সম্ভব নয়।'
বিনোদ বাবুর কথা মত আমি অঙ্ক করলাম একেবারের ইতিহাসের মত করে, অর্থাৎ মুখস্থ করে। মাধ্যমিকে অঙ্কে ছাপ্পান্ন নম্বর নিয়ে পাশও করলাম। জীবনে কখনও আমি অঙ্কে এত নম্বর পাইনি। প্রতি বারই আমার অঙ্কে একেবারে ভরা ডুবি অবস্থা। অবশেষে অঙ্কে ছাপ্পান্ন নম্বর পেয়ে আমি ভক্তি ভরে অঙ্ক বইটাকে প্রণাম করে ইলেভেনে আর্টস নিয়ে নতুন স্কুলে ভর্তি হলাম।
সুশান্ত বাবু অবশ্য আমাকে ক্লাস টেন থেকেই ইংরাজি পড়াবার ভার নিয়েছিলেন। ইংরাজিতে আমি খুব একটা খারাপ ছিলাম না। তবে গ্রামারটা শিখতে আমার বড় দেরী হয়ে গিয়েছিল। ক্লাস ফাইভের গ্রামার আমি শিখলাম ক্লাস টেনে। তারপর রাত দিনের পরিশ্রমে এখন ইংরাজিটা আমার বেশ কিছুটা করায়ত্ত হয়ে গিয়েছে। সুশান্ত বাবুর পড়ানোর কৌশল আমার খুব ভাল লাগে। শুধু তাঁর পড়ানোর কৌশল নয়, তাঁর কথা বার্তা, চাল চলন - সবই আমার খুব ভাল লাগে। তাঁকে অনুসরণ করতে করতে আমি বোধ হয় কিছুটা তাঁরই মত হয়ে পড়েছি। মাঝে মধ্যে আমি নিজেও লক্ষ্য করি যে, আমি ঠিক তাঁরই মত করে হাঁটছি, তাঁরই মত করে কথা বলছি। শুধু তাই নয় আড়ালে আবডালে আমি এখন তাঁরই মত করে সিগারেটে টান দিতেও শুরু করেছি।
একদিন সুশান্ত বাবু আমাদের কোয়াসি প্যাসিভ ভয়েস শেখাচ্ছেন। এমন সময় নতুন একজন আমাদের ক্লাসে জয়েন করল। দেখতে সুশ্রী, বেশ ছোটখাটো গড়ন, দেখলে মনে হয় সদা হাস্যময়ী জলজ্যান্ত হাসির দেবী। প্রথমে দেখে মনে হল ক্লাস নাইনে কি টেনে পড়ে বোধ হয়। সুশান্ত বাবু আমাদের সঙ্গে নবাগতার পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, 'এ হল নীহারিকা, ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। আজ থেকে ও তোমাদের ব্যাচেই পড়বে।' আরও অবাক হলাম যখন শুনলাম যে সে আমারই কলেজে পড়ে। আমারই কলেজে আর আমারই ক্লাসে পড়ে অথচ আমি খেয়ালই করিনি! যদিও মাত্র কয়েকদিনই হল আমাদের কলেজের ক্লাস শুরু হয়েছে। সেই কারণেই হয়তো আমি ওকে আগে লক্ষ্য করিনি। নীহারিকাকে নিয়ে আমাদের ব্যাচের মোট সংখ্যা হয়ে দাঁড়াল চার জন। আমাদের ব্যাচে আমি ছাড়া পড়ে রাঘব আর বিবেক। দুজনেই ক্লাস নাইনে পড়ে। আমিই একমাত্র উঁচু ক্লাসের। তবুও কেউ আমাকে দাদা বলে ডাকে না। নীহারিকাকে বসতে বলে স্যার চা আনতে উঠে গেলে নীহারিকা আমার পাশে বসে আমাকে দেখে বলল, 'তুমি রাহুল দা না?' আমি বললাম, 'হ্যাঁ, তুমি আমাকে চেনো?' নীহারিকা মুচকি হেসে আমার পাশে বসে বলল, 'স্যারের মুখে তোমার অনেক নাম শুনেছি।‘ নীহারিকার কথা শুনে তো আমি বেমালুম অবাক হয়ে গেলাম। আমি যেন নিজের কানকেই ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারলাম না। আমি আবার অবাক হয়ে বললাম, 'স্যার আবার কারো কাছে আমার নাম করেন নাকি?' নীহারিকা বলল, 'হ্যাঁ, করেন তো। নাহলে আমি তোমার নাম জানলাম কি করে?' আমি বললাম, 'সে না হয় বুঝলাম, স্যারের কাছে আমার নাম তুমি হয়ত শুনেছ, কিন্তু আমাকে তুমি চিনলে কি করে? এর আগে তো তোমার সঙ্গে আমার কখনও আলাপ হয়েছে বলে মনে হয় না।' নীহারিকা বলল, 'আলাপ হলেই বুঝি চেনা যায়?' আমি চুপ করে রইলাম। নীহারিকা আবার বলল, 'স্যারের কাছে তোমার নামে এত কথা শুনেছি যে, আমি মনে মনে তোমার মুখ কল্পনা করে নিয়েছিলাম। এখন দেখলাম, আমার কল্পনার রূপের সঙ্গে তোমার রূপের হু বহু মিল। তাই আর তোমাকে চিনতে আমার কোনও অসুবিধা হল না।'
আমার সম্পর্কে নীহারিকার কথা শুনে রাঘব আর বিবেক ফাজলামি করে একটু গলাটা ঝেরে নিল। নীহারিকা বোধ হয় ওদের ইশারা বুঝতে পারল। তাই সে আর কোনও কথা না বাড়িয়ে চুপ করে গেল। স্যার হাতে করে চায়ের পেয়ালা নিয়ে ঢুকে কাঠের চেয়ারটায় পায়ের উপর পা তুলে বসলেন। তারপর চেয়ারে বেশ একটু সুখ করে কাত হয়ে বসে দু একবার চায়ের কাপে বেশ আমেজ করে চুমুক দিয়ে পড়াতে পড়াতে ঠিক যেখানটা থেমে ছিলেন, সেখান থেকেই আবার বলতে শুরু করলেন। আমি লক্ষ্য করলাম, নীহারিকাও ঠিক আমারই মত বেশ মনোযোগ সহকারে স্যারের কথা শুনতে লাগলো।
স্যারের পড়ানো শেষ হতে হতে রাত্রি দশটা বেজে গেল। স্যার আমাকে বললেন, নীহারিকাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। শুধু তাই নয়, তিনি আরও বললেন যে, নীহারিকাকে রাত্রে বাড়িতে পৌঁছে দেবার ভার এবার থেকে আমার উপরই থাকবে। স্যারের কথা মত আমি ভাল ছেলের মত ঘাড় নেড়ে নীহারিকাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে লাগলাম। আমার কাঁধে এত বড় একটা দায়িত্বের ভার দেখে রাঘব আর বিবেকের যে একটু হিংসে হল, সেটা বুঝতে আমার খুব একটা অসুবিধা হল না।
এরকম করে বেশ কয়েকদিন চলতে লাগলো। সুশান্ত বাবু আমাদের প্রতিদিনই পড়ান। স্যার শুধু একটা ব্যচই পড়ান। আমাদের ছাড়া আর কোনও প্রাইভেট টিউশন তিনি পড়ান না। শুধু তাই নয়, তিনি কারো কাছ থেকে কোনও টাকা পয়সাও নেন না। প্রতিদিন আমি নীহারিকাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে লাগলাম। নীহারিকার সঙ্গে আমার বেশ ভাব জমে গেল। কিছুদিনের মধ্যেই আমরা ভাল বন্ধু হয়ে গেলাম। শুধু তাই নয়, এখন থেকে আমরা একসাথে কলেজে যেতেও শুরু করলাম। নীহারিকা আমাকে একদিন বলল, 'রাহুল দা জানো, তুমি না ঠিক সুশান্ত দার মত।' নীহারিকা স্যারকে দাদা বলে ডাকত। তার দাদার ছোটবেলা-কার বন্ধু কিনা, সেই কারণেই সে স্যারকে ছোটবেলা থেকেই দাদা বলে ডাকত। আমি বললাম, 'স্যারের মত হওয়া কি সোজা কথা? কোথায় স্যার আর কোথায় আমি।' নীহারিকা বলল, 'কেন তা হতে যাবে কেন? সুশান্ত দাও তো কোনও এক সময় তোমারই মত ছাত্র ছিল। সে কি এক দিনেই স্যার হয়ে গেছে নাকি?' আমি বললাম, 'সে সব কথা থাক। স্যারকে আমি খুব ভক্তি করি। তিনি না থাকলে আমার বোধ হয় আর পড়াশোনা এগোন সম্ভব হত না। নীহারিকা বলল, 'কেন তা কেন?' আমি বললাম, 'তুমি তো জান নীহারিকা আমার অবস্থার কথা। টাকা দিয়ে প্রাইভেট টিউশন পড়ব, এমন অবস্থা আমাদের নয়। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা আমাদের সংসারের। বাবা কোনক্রমে এখনও পর্যন্ত সংসারটা টেনে চলেছেন। আমার উপর বাবার খুব আশা-ভরসা। স্যার ছিলেন বলেই তো আমি এখনও পর্যন্ত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারছি। স্যার যে শুধুমাত্র আমাকে বিনা পয়সায় পড়ান তা নয়, তিনি আমার কলেজের মাইনের টাকা, এমনকি বই কেনার টাকাও দেন। স্যার হলেন আমার কাছে ভগবান। তাই তো স্যারকে আমি এত ভক্তি করি। তিনি যে আমার জীবনে ভগবানের জলজ্যান্ত মূর্তি।' নীহারিকাকে এসব কথা বলতে বলতে আমার চোখ দুটো জলে ছল ছল করে উঠল। কিন্তু রাত্রির অন্ধকারে নীহারিকা তা দেখতে পেল না। তবে কিছুটা আন্দাজ করল সে। নীহারিকা আমাকে বলল, 'রাহুল দা, তুমি কি কাঁদছ?' আমি বললাম, 'আরে ধুর পাগলি! খামোখা কাঁদতে যাবো কেন। এমনিই গলাটা একটু ধরে এলো। চল দেখি, তাড়াতাড়ি পা চালাও, এই তোমার বাড়ি চলে এলো বলে, আমি পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে দেশলাই দিয়ে জ্বালালাম। নীহারিকা অবাক হয়ে বলল, 'রাহুল দা তুমি সিগারেট খাও নাকি?' আমি বললাম, 'আরে ধুর, নেশা টেশা বলে আমার কিছু নেই। রাঘবের কাছ থেকে মাঝে মধ্যে একটা আধটা নিয়ে খাই আরকি। ও খুব খায়। একেবারে চেন স্মোকর।' নীহারিকার মুখের দিকে ল্যাম্প পোষ্টের আলোয় দেখলাম বেশ রাগ রাগ ভাব। সে আমাকে বলল, 'আমি কিন্তু সিগারেট খাওয়া একদম পছন্দ করি না। তুমি কি জানো, একটা সিগারেটে মানুষের কতটা ক্ষতি হয়? আর তাছাড়া একটা সিগারেটের যা দাম, তাতে তোমার একটা পেন হয়ে যাবে।' আমি বললাম, 'বললাম তো, আমি কিনে খাই না। রাঘবের কাছ থেকে একটা আধটা নিয়ে খাই। স্যার কেমন সিগারেটে টান মারেন দেখেছ কখনও? স্যারকে একটু নকল করি আরকি।' নীহারিকা আমার ঠোট থেকে সিগারেটটা এক ঝটকায় টেনে নিয়ে মাটিতে ফেলে দিল। বলল, যদি নকলই করতে হয় তবে স্যারের গুণগুলোকে কর, দোষ গুলোকে নয়।' আমি দেখলাম নীহারিকা বেশ রেগে গেছে। আমি আর কথা বাড়ালাম না। বললাম, 'আচ্ছা বাবা ভুল হয়ে গেছে। এই কান মলছি, কাল থেকে আর সিগারেট ছোঁব না। এবার খুশি তো?' নীহারিকা আমার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে ঠর ঠর করে গেট ঠেলে বাড়িতে ঢুকে গেল। পিছন ফিরে একবারও তাকাল না পর্যন্ত।
২
বসন্ত পঞ্চমী। ঘুমের ঘোরে কথাটা কানে যেতেই চোখটা ঝপ করে খুলে গেল। অন্যান্য দিনে হলে চোখের কড়কড়ানি ভাব কাটতেই মিনিট পনেরো কেটে যেত। কিন্তু আজ আর তা হবার নয়। হাত ঘড়িটা হাত বাড়িয়ে নিয়ে দেখলাম, সাতটা বাজতে পনের মিনিট বাকি। আজ আর কিছুতেই সময় নষ্ট করা যাবে না। কলতলায় ইতিমধ্যেই হুড়োহুড়ি পড়ে গেছে। মিলুর পিসিমা থেকে শুরু করে পাঁচ বছরের ছোট্ট টুনু পর্যন্ত কলতলায় ইয়া লম্বা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এত ভিড় তার ওপর মেয়েদের মাঝে কিছুতেই স্নান করা সম্ভব নয়। পুরো বস্তি জুড়ে একটাই মাত্র কল। তবে তা থেকে যে কল কল করে যে জল বেরোবে সেটা দূর অস্ত। কুড়ি বাইশ বার একনাগাড়ে হাতল ধরে হ্যাঁচড় প্যাঁচড় করার পরে গিয়ে এক বালতি জল উঠবে। তাও আবার নোনতা। কাছেই গঙ্গা। জলের স্বাদ নোনতা হবার নয়। তবুও কোনও এক অদ্ভুত ভৌগলিক ভুলে হয়তো জলের স্বাদ নোনতা। সে যাই হোক গিয়ে, আজ একেবারে টাইট সিডিউল। সকালে অঞ্জলি দেওয়া থেকে শুরু করে রাত্রে খচুড়ী ফিস্ট- কিছুই মিস করা যাবে না। মিস কথাটা মনে আসতেই মনে হল নীহারিকার কথা। আজ আমাদের একসাথে কলেজে যাবার কথা। আমি যে নীহারিকাকে ভালোবাসি কথাটা কেউই প্রায় জানে না। নীহারিকাও না। আপাতত শুধুমাত্র আমিই জানি। কিন্তু কিছুতেই আর ওর কাছে কথাটা পৌঁছে দেওয়ার সাহস পাচ্ছি না। কথাটা আর কেউ না জানুক নীহারিকার তো অন্তত পক্ষে জানবার কথা। কিন্তু কিছুতেই পেরে উঠছি না। যত বারই বলতে গেছি ততবারই কোনও না কোনও কারণে বাধা প্রাপ্ত হয়েছি। এই তো সেদিন মানে শেষ যেদিন কলেজে ক্লাস হল প্রায় বলেই ফেলেছিলাম কথাটা। কিন্তু কিছুতেই আর বলতে পারলাম না। যেই না বলতে যাবো, ওমনি সাড়ে পাঁচটার লোকাল ট্রেন এডভান্স সোয়া পাঁচটায় এসে হাজির হল। তবে আজ যে করেই হোক ব্যাপারটা নীহারিকার কান পর্যন্ত পৌঁছতে হবে। সকালের ট্রেনে আজ আমাদের কলেজে যাওয়ার কথা। সকাল মানে সকাল দশটা। হাতে এখনও কিছুটা সময় আছে। আমি চট জলদি কাঁধে গামছা নিয়ে গঙ্গার দিকে রওনা দিলাম। গঙ্গায় নামতে আমার বেশ ভয় করে। কি জানি কেন ছোটবেলা থেকেই আমার জলে ভয়। কি যেন বলে হাইড্রোফোবিয়া না কি, সেই ভয়। এক হাঁটু জলে নামলেই মনে হয়ে এই বুঝি কেউ পা ধরে হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে গেল। আসলে জলের নিচে দেখতে পাওয়া যায়না বলেই বোধ হয় এত ভয় করে। সকাল বেলায় প্রায় হাড় হিম করা ঠাণ্ডা জলে দুটো ডুব গেলে মাথায় এক পাতা শ্যাম্পু ঘষে যা হোক করে তাড়াহুড়ো করে তৈরে হতে হতেই নটা বেজে গেল। কলতলায় তখনও পর্যন্ত মেয়েরা কলকাকলিতে মেতে খল খল করে হাসতে হাসতে গায়ে কুল কুল করে ঠাণ্ডা জল ঢালছে। বলা বাহুল্য সকালে ব্রেকফাস্টের কোনও প্রয়োজন নেই। অঞ্জলি না দেওয়া পর্যন্ত জল স্পর্শও করা যাবে না। এখন খুঁজে পেতে দেখতে হবে কোথায় সকাল সকাল পুজো হচ্ছে। এসব ব্যাপারে সবথেকে ভাল খবর পাওয়া যাবে হাবুলের কাছ থেকে। হাবুল তিনবার মাধ্যমিকে গাড্ডু মেরে অবশেষে থেমেছে। কিন্তু সরস্বতী পূজোয় অঞ্জলি দিতে তার কিছুমাত্র ভুল হয় না। হাবুল ইতিমধ্যেই সেজে গুজে তৈরি হয়ে নিয়েছে। কিন্তু মেজাজটা আজ তার মোটেই ভাল নেই। পরশু রাত্তিরে